প্রাকৃতিক মমি তৈরির লেক-ন্যাট্রন বা ন্যাট্রন হ্রদ যে লেকে নামলেই প্রাণী মমিতে পরিনত হয়ে যায়।


প্রাচীন মিশরে মৃত্যুর পর মরদেহ কে মমিতে পরিনত করে রাখার প্রথা ছিল  ধর্মীয় বিশ্বাস ও আভিজাত্যের প্রতীক।আর এই মমি বানানোর কাজ করত তখনকার মানুষেরাই।কিন্তু পৃথিবীতে এমন একটি জায়গা রয়েছে যেখানে প্রকৃতি নিজেই মমিতে পরিনত করে বিভিন্ন প্রাণীর দেহ। বিষয়টি শুনতে অবাস্তব মনে হলেও এমন একটি লেকের অস্তিত্ব রয়েছে  দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ার উত্তর প্রান্তে। লেকটির নাম লেক ন্যাট্রন বা ন্যাট্রন হ্রদ ।যেখানে প্রাণী কিছুক্ষণ অবস্থান করলেই মমিতে পরিনত হয়। মূলত তানজানিয়ার অরুশা অঞ্চলে এটি অবস্থিত। লেকটি দৈর্ঘ্যে ৫৭ কিলোমিটার এবং প্রস্থে ২২ কিলোমিটার । এওয়াসো নায়গ্রো নদী ও  আশপাশের বেশ কয়েকটি উষ্ণ প্রস্রবণের জল এই হ্রদে পড়ে। ফলে বিভিন্ন খনিজে সমৃদ্ধ এই হ্রদের জল।কিন্তু ঠিক কি কারনে এই হ্রদ এতটাই ভয়াবহ যে হ্রদে নামলেই মমিতে পরিনত হতে হয়, জীবন্ত প্রানী মুহূর্তেই হয়ে যায় পাথর?



অতীতে এই হ্রদ নিয়ে অনেক কথা শোনা গেলেও প্রামাণ্য কিছু মেলেনি।  নিক ব্রান্ডট নামে এক ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার ২০১১ সালে নেট্রন হ্রদের সামনে গিয়ে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। হ্রদের পাড়জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ছিল অসংখ্য পশুপাখির দেহ। ব্রান্ডট বলেন, সেগুলো দেখে মনে হচ্ছিল যেন কোনও পাথরের মূর্তি সাজিয়ে রাখা।
 
এই প্রানীগুলো নিজের অজান্তেই মমিতে পরিনত হয়েছে।অনন্য সুন্দর এই লেকে লুকিয়ে আছে ভয়াবহ এক রহস্য। 


লেকের পাশে রয়েছে এক সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। এই আগ্নেয়গিরির নাম ওল দইন্নো লেঙ্গাই। খুবই বিরল প্রকৃতির এই আগ্নেয়গিরি থেকে উদগিরিত হয় সোডিয়াম কার্বেনট ও পটাশিয়াম কার্বেনট সমৃদ্ধ লাভা। যা ন্যাট্রকার্বনেট বা ন্যাট্রন নামে পরিচিত। এটি অত্যন্ত ক্ষারীয় ।প্রাচীন মিশরে মমি তৈরির জন্যে এটিই ছিল মূল উপাদান।এই লেকের pH মাত্রা ১০.৫ এর উপরে। প্রায় ২৬ লক্ষ বছর আগে প্লিসটোসিন যুগে প্রচুর সোডিয়াম ও কার্বোনেট যুক্ত ট্র্যাকাইট লাভা দিয়ে তৈরি হয়েছে নেট্রন হ্রদের তলদেশ।বছরের বেশির ভাগ সময়ই এই লেকের তাপমাত্রা থাকে ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।যে কারনে জল বাষ্পীভূত হয়ে যায় দ্রুত। আর জলের মতো তরল লাভা পড়ে থাকে তলদেশে

সোডিয়াম ও কার্বনেটের কারনে লেকে জন্মায় সায়োনোব্যাকটিরিয়া । এই ব্যাকটিরিয়ার শরীরে লাল রঞ্জক পদার্থ থাকে। যার কারনে লেকের জল লাল রঙের দেখায় । বিজ্ঞানীদের মতে,পশুপাখি লাল রঙে আকৃষ্ট হয়ে লেকে নামে। কিন্তু অতিরিক্ত ক্ষারধর্মীর জলের কারনে তাদের মৃত্যু হয়। কিন্তু লেকের পানিতে লাফিয়ে পড়ে যদি সঙ্গে সঙ্গে  উঠে যাওয়া যায় তাহলে কোন সমস্যা নেই। তবে এই জলে কিছুক্ষন অবস্থান করলেই চামরা শুষ্ক হয়ে যায় । অতপর চামরা ডিহাইড্রেট হয়ে পাথরের মত শক্ত হয়ে যায়। যে কারনে মারা যায় পশুপাখি। অন্যদিকে ন্যাট্রন উত্তম সংরক্ষক । যে কারনে মৃত প্রানীগুলো বছরের পর বছর এখানে মমি আকারে সংরক্ষিত থাকে। 



Previous
Next Post »