রহস্যে ঘেরা বৃন্দাবন ধামের নিধিবন। আজো নাকি প্রতিরাতে শ্রীকৃষ্ণ এখানে আসেন।
ভারতবর্ষেএমন অনেক মন্দির আছে, যার ছত্রে ছত্রে লুকিয়ে আছে রহস্য। আর তেমনই একটি হলো হিন্দুদের অতি পবিত্র তীর্থস্থান বৃন্দাবনের নিধিবন মন্দির। বৃন্দাবনের সব থেকে আকর্ষণীয় স্থান হলো এই নিধিবন। নিধি অর্থ সম্পদ এবং চারপাশ জঙ্গলে ঘেরা বলে বন। সেখান থেকেই এই মন্দিরের নাম নিধিবন। এই মন্দিরটি ভারতের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে অন্যতম। প্রতি বছর লাখ লাখ দর্শনার্থী এই মন্দির দর্শনে আসেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও রাধারাণীর প্রেমের প্রতীক হিসেবে আজো এই স্থান প্রসিদ্ধ। এখানেই কেটেছে শ্রীকৃষ্ণের ছেলেবেলা। এই মন্দিরটি বাঁকে বিহারী মন্দির, মুরলীধর মন্দির এবং লীলা ধর মন্দির নামেও পরিচিত। জঙ্গলে ঘেরা এই মন্দিরে বাঁকে বিহারীর পবিত্র বিগ্রহ রয়েছে।
যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত বৃন্দাবনের নিধিবন মন্দির থেকে আজও ভেসে আসে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মোহন বাঁশির সুর। এখানের প্রচলিত বিশ্বাস এমনটাই বলে। বৃন্দাবনের নিধিবন কে ঘিরে রয়েছে অনেক রহস্য। দিনের বেলা এই মন্দিরে পূণ্যার্থী ও পূজারীর ভিড় থাকে। কিন্তু রাত নামলেই নাকি বদলে যায় মন্দির এলাকা। শুধু মানুষ নয় হনুমান ও পাখি সহ অন্যান্য জীবজন্তুও সন্ধ্যার পর বন ছেড়ে চলে যায়। সন্ধের পর মন্দিরে নাকি এখনও রাধা কৃষ্ণের লীলা খেলা চলে। আর ঠিক এই কারনেই সন্ধের পর মন্দিরে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না।সন্ধ্যা নামতেই জনসাধারণকে এই মন্দির থেকে বের করে মূল দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারণ এই সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আসেন এবং গোপিনীদের সঙ্গে রাসলীলায় মাতেন বলে মনে করে হয়। প্রচলিত আছে যে, কেউ যদি লুকিয়ে এই রাসলীলা দেখে ফেললে সে পাগল হয়ে যায়। এমনকি তার মৃত্যুও হতে পারে। সন্ধ্যাআরতির পরই এই মন্দিরের সমস্ত দরজা-জানালা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাইরে বের করে দেওয়া হয় সমস্ত পর্যটক ও পূণ্যার্থীদের। সকাল পর্যন্ত এখানে কারোর প্রবেশ নিষেধ। এই মহারাসলীলা কাউকে চাক্ষুস দেখতে দেওয়া হয় না। কয়েকজন অতি-উত্সাহী কখনও কখনও লুকিয়ে সন্ধের পর মন্দিরে থেকে গিয়েছিলেন। সকালবেলা তাঁদের হয় মৃত, নয়তো পাগল অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি সন্ধের পর বন্ধ মন্দির থেকে ভেসে আসা ঘুঙুরের শব্দ অনেকেই শুনেছেন।
নিধিবনের ভিতর রঙ মহল নামে একটি ছোট মন্দির রয়েছে। সেখানে প্রতি রাতে শ্রীকৃষ্ণ, শ্রী রাধারানীর সঙ্গে এখানে বিশ্রাম করেন। তাই সন্ধ্যার আগেই রঙ মহলে কৃষ্ণের জন্য চন্দনের খাট, জলের পাত্র, রাধারানীর জন্য শৃঙ্গারের সামগ্রী, প্রসাদ, পান সব এখানে রেখে দেওয়া হয়। সমগ্র মন্দির সাজিয়ে তোলা হয়। নিধিবনের সাথে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এই ছোট মন্দিরটিরও। সকাল পাঁচটার সময় যখন মন্দিরের মূল দরজা খোলা হয়, তখন দেখা যায় রাতের সব সাজানো গোছানো জিনিস ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
নিধিবনের গাছগুলিও বেশ রহস্যময়। প্রতিটি গাছের শাখা উপরে নয় নীচের দিকে বাড়তে থাকে। মনে করা শ্রীকৃষ্ণকে শ্রদ্ধা জানিয়ে গাছের শাখা-প্রশাখা নীচের দিকে মুখ করে রয়েছে বলে মনে করা হয়। এখানের গাছগুলি এতো ঘন যে রাস্তা খুঁজে পাওয়া মুশকিল।এই বনের বিশেষত্ব হল তুলসীগাছ। প্রতিটি তুলসী গাছ এখানে জোড়ায় জোড়ায়। মনে করা হয় রাধা-কৃষ্ণ রাসলীলায় মেতে উঠলে এই তুলসী গাছগুলিই গোপিনী হয়ে ওঠে, আর সকাল হতেই ফের গাছে পরিণত হয়। গাছগুলি নৃত্যের ভঙ্গিতে বেড়ে উঠে। যদিও এই মন্দির ও তার আশেপাশের এলাকা অত্যন্ত রুক্ষ, কিন্তু এই সব গাছগুলো সারা বছর সবুজে ভরে থাকে।
শোনা যায়, বিশাখা নামে এক গোপিনীর তৃষ্ণা মেটাতে কৃষ্ণ নাকি তাঁর বাঁশি দিয়ে কুণ্ড তৈরি করেছিলেন। আর সেই কুণ্ড বিশাখা কুণ্ড নামে পরিচিত।
অনেক বৈজ্ঞানিক এই মন্দিরের রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করেছেন। তবে কিছু একটা অস্বাভাবিক এখানে রয়েছে বলে মেনে নিয়েছেন তাঁরাও।
ConversionConversion EmoticonEmoticon